Friday, April 29, 2011

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও জগন্নাথদেবের রথযাত্রা

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ও জগন্নাথদেব


রথযাত্রা 

"রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব—হাসে অন্তর্যামী।''

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত এই পঙক্তিগুলোর সাথে কে না পরিচিত? বিশ্বকবি যে রথযাত্রার কথা কবিতায় লিখেছেন, সে রথযাত্রার রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। সে ইতিহাসে আছে কল্পকাহিনী আর পুরাণের মিশেল, আছে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর আচার-প্রথার বর্ণনা। সেসব ইতিহাস আর প্রথাসিদ্ধ ঘটনার বর্ণনা নিয়ে এই আয়োজন।

 

রথযাত্রা হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এতে রথের ওপর দেবতাদের মূর্তি স্থাপন করে রথ চালানো হয়। বিভিন্ন পুরাণে বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার উল্লেখ আছে, যেমন: ভবিষ্যপুরাণে সূর্যদেবের রথযাত্রা, দেবীপুরাণে মহাদেবীর রথযাত্রা, পদ্মপুরাণ, স্কন্দপুরাণ ও ভবিষ্যোত্তরপুরাণে বিষ্ণুর রথাযাত্রা বর্ণিত হয়েছে। বিভিন্ন দেবদেবীর রথযাত্রার সময়কালও বিভিন্ন; কোথাও বৈশাখ মাসে, কোথাও আষাঢ় মাসে, আবার কোথাও কার্তিক মাসে রথযাত্রার অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই অনুষ্ঠান হয় আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে, আর একাদশী তিথিতে হয় প্রত্যাবর্তন বা ফিরতি রথ। অর্থাৎ রথটি প্রথম দিন যেখান থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়, আটদিন পরে আবার সেখানেই এনে রাখা হয়। একেই বলে উল্টা রথ। রথযাত্রা বা রথদ্বিতীয়া ভারতীয় রাজ্য ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রত্যাবর্তনের স্মরণে এই উৎসব আয়োজিত হয়ে থাকে। দেশের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ রথযাত্রা ওড়িশার পুরী শহরের জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল, হুগলির মাহেশ কলকাতা ও বাংলাদেশের ধামরাই জগন্নাথ রথ ইসকনের রথ বিশেষ প্রসিদ্ধ। রথযাত্রা উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে মেলার আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে রথযাত্রার সময় যাত্রাপালা মঞ্চস্থের রীতি বেশ জনপ্রিয়। রথযাত্রার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির সহ দেশের সকল জগন্নাথ মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি সর্বসমক্ষে বের করা হয়। তার পর তিনটি সুসজ্জিত রথে (কোনও কোনও জায়গায় একটি সুসজ্জিত সুবৃহৎ রথে) বসিয়ে দেবতাদের পূজার পরে রথ টানা হয়। পুরীতে রথ টানতে প্রতি বছর লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর সমাগম হয়। এখানে তিন দেবতাকে গুণ্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। পুরীতে বছরে এই এক দিনই অহিন্দু ও বিদেশিদের মন্দির চত্বরে এসে দেবদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। পুরীতে যে রথগুলি নির্মিত হয় তাদের উচ্চতা ৪৫ ফুট।
সেখানে সাতদিন থাকার পর আবার উল্টো রথে জগন্নাথ মন্দিরে ফিরে আসে। বর্তমানে তিনটি রথ ব্যবহৃত হয়। তবে আজ থেকে আনুমানিক সাতশো বছর পূর্বে রথযাত্রার যাত্রাপথ দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। আর সেই দুটি ভাগে তিনটি-তিনটি করে মোট ছ'টি রথ ব্যবহৃত হতো। কেননা, সেসময় জগন্নাথ মন্দির থেকে গুণ্ডিচা আসার পথটির মাঝখান দিয়ে বয়ে যেতো এক প্রশস্ত বলাগুণ্ডি নালা। তাই জগন্নাথ মন্দির থেকে তিনটি রথ বলাগুণ্ডি নালার পার পর্যন্ত এলে পরে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার মূর্তি রথ থেকে নামিয়ে নালা পার করে অপর পাড়ে অপেক্ষমাণ অন্য তিনটি রথে বসিয়ে ফের যাত্রা শুরু হতো। ১২৮২ খ্রিস্টাব্দে, রাজা কেশরী নরসিংহ পুরীর রাজ্যভার গ্রহণের পর তাঁর রাজত্বকালের কোনো এক সময়ে এই বলাগুণ্ডি নালা বুজিয়ে দেন। সেই থেকে পুরীর রথযাত্রায় তিনটি রথ।
যিনি এই দুনিয়ার মালিক ও জগতের স্বামী তিনিই জগন্নাথ। আমরা সবাই জগন্নাথদেবকে চিনি। পুরীর সেই জগন্নাথদেবের কথা আমরা জানি। পুরীর জগন্নাথদেবের মন্দিরের বিশাল রথযাত্রা খুবই জনপ্রিয়। জগন্নাথদেবের মন্দিরে জগন্নাথের সাথে রয়েছে বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি। হস্তপদ নেই, তবু তিনি গমন করছেন, গ্রহণ করছেন। দু’চোখ বিস্ফোরিত পল্লববিহীন, তবু তাঁর দৃষ্টি সর্বত্রব্যাপী। কর্ণ নেই, তবু জগতের কোনও শব্দই তাঁর অশ্রুত নয়। এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা ঘটে চলেছে তার কোনও কিছুই তাঁর অজ্ঞাত নয়। এই হলেন তিনি জগতের নাথ, জগন্নাথ-পরমেশ্বর। জগন্নাথস্বামী, নয়ন পথগামী।

রথযাত্রার সূত্রপাত

উড়িষ্যার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ এ জগন্নাথদেবের রথযাত্রার ইতিহাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে। সে সময় উড়িষ্যা মালবদেশ নামে পরিচিত ছিল। সেই মালবদেশের সূর্যবংশীয় পরম বিষ্ণুভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে ভগবান বিষ্ণুর জগন্নাথরূপী মূর্তি নির্মাণ করেন এবং রথযাত্রারও স্বপ্নাদেশ পান। পরবর্তীতে তাঁর হাত ধরেই পুরীতে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ ও রথযাত্রার প্রচলন শুরু হয়।
বাংলায় রথ প্রচলনের আবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট। পুরাবিদদের মতানুযায়ী, পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রা থেকে বাংলায়ও রথযাত্রার সূচনা৷ চৈতন্য মহাপ্রভু নীলাচল থেকে এই ধারাটি বাংলায় নিয়ে আসেন৷ চৈতন্যভক্ত বৈষ্ণবরা বাংলায় পুরীর অনুকরণে রথযাত্রার প্রচলন করেন। এখন বাংলার বহু জায়গাতেই এই রথযাত্রা অত্যন্ত জনপ্রিয়৷
বাংলা আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথ উৎসব হয়ে থাকে। এই দিন দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে গুন্ডিচা মন্দিরে যান জগন্নাথ। সেখান থেকে সাতদিন পর নিজ মন্দিরে ফিরে আসেন। যাওয়ার দিনকে বলে সোজা রথ এবং একই পথে নিজ মন্দিরে ফিরে আসাকে বলে উলটা রথ। পরপর তিনটি সুসজ্জিত রথে চেপে যাত্রা শুরু করেন তারা। গুন্ডিচা মন্দির ভ্রমণকেই আবার মাসির বাড়ি যাওয়া মনে করেন অনেকে। পুরাবিদেরা বলেন, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রীই ছিলেন গুণ্ডিচা। তবে এ নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতবিভেদ দেখা যায়।

পুরীতে রথ উৎসব

স্কন্ধপুরাণে সরাসরিভাবে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার কথা পাওয়া যায়। সেখানে ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র মাহাত্ম্য’ কথাটি উল্লেখ করে মহর্ষি জৈমিনি রথের আকার, সাজসজ্জা, পরিমাপ ইত্যাদির বর্ণনা দিয়েছেন। ‘পুরুষোত্তম ক্ষেত্র’ বা ‘শ্রীক্ষেত্র’ বলতে আসলে পুরীকেই বোঝায়।
পুরীতেই যেহেতু জগন্নাথ দেবের মন্দির স্থাপিত, তাই এই মন্দিরকে পবিত্রতম স্থান বলে মনে করা হয় এবং এর অন্যতম আকর্ষণ রথযাত্রা। প্রতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরা ক্রমে পুরীর রাজপরিবার আজও আছে। সেই রাজপরিবারের নিয়ম অনুসারে, যিনি রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন, তিনিই পুরীর রাজা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর পর পর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন এবং সোনার ঝাড়ু ও সুগন্ধী জল দিয়ে রথের সম্মুখভাগ ঝাঁট দেন। তারপরই পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। তিনজনের জন্য আলাদা আলাদা তিনটি রথ। রথযাত্রা উৎসবের মূল দর্শনীয় দিকটিও হল এই রথ তিনটি। তিনটি রথ যাত্রার কিছু নিয়ম রয়েছে এবং রথের আকার, রঙেও ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন-
  • প্রথমে যাত্রা শুরু করে বড় ভাই বলভদ্রের রথ। এই রথের নাম তালধ্বজ। রথটির চৌদ্দটি চাকা। উচ্চতা চুয়াল্লিশ ফুট। রথের আবরণের রঙ নীল।
  • তারপর যাত্রা করে বোন সুভদ্রার রথ। রথের নাম দর্পদলন। উচ্চতা প্রায় তেতাল্লিশ ফুট। এই রথের মোট বারোটি চাকা। যেহেতু রথটির ধ্বজা বা পতাকায় পদ্মচিহ্ন আঁকা রয়েছে, তাই রথটিকে পদ্মধ্বজও বলা হয়ে থাকে। রথের আবরণের রঙ লাল।
  • সর্বশেষে থাকে শ্রী কৃষ্ণ বা জগন্নাথদেবের রথ। রথটির নাম নন্দীঘোষ। পতাকায় কপিরাজ হনুমানের মূর্তি আঁকা রয়েছে তাই এই রথের আর একটি নাম কপিধ্বজ। রথটির উচ্চতা পঁয়তাল্লিশ ফুট। এতে ষোলোটি চাকা আছে। রথটির আবরণের রঙ হলুদ।
তিনটি রথের আবরণীর রঙ আলাদা হলেও প্রতিটি রথের উপরিভাগটি লাল রঙেরই হয়ে থাকে। রথ তিনটি সমুদ্রোপকূলবর্তী জগন্নাথ মন্দির থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে গুণ্ডিচা মন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

জগন্নাথের মূর্তির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জগন্নাথ মূর্তির হাত-পা নেই। শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র জগন্নাথের এই মূর্তির বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন সুন্দর করে।

জগন্নাথদেবের মূর্তির রূপ নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। কেন হস্তপদবিহীন দেহ তাঁর, কেন এমন অদ্ভুত তাঁর অবতার? এই প্রসঙ্গে স্বয়ং দেবতার কিছু বিশ্লেষণ দেখা যায়। কঠোপনিষদে বলা হয়েছে, “না আত্মানং রথিনংবিদ্ধি শরীরং রথমেবতু”। অর্থাৎ, এই দেহই রথ আর আত্মা দেহরূপ রথের রথী। ঈশ্বর থাকেন অন্তরে। তার কোনো রূপ নেই। তিনি সর্বত্র বিরাজী। বেদ বলছে, “অবাঙমানসগোচর”। অর্থাৎ, মানুষ বাক্য এবং মনের অতীত। মানুষ তাই তাকে মানবভাবে সাজায়। এ বিষয়ে কৃষ্ণ যজুর্বেদিয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে-
‘‘অপাণিপাদো জাবানো গ্রহীতা
পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্নঃ ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্’’ ।।
অর্থাৎ, তার লৌকিক হস্ত নাই, অথচ তিনি সকল দ্রব্য গ্রহণ করেন। তার পদ নাই, অথচ সর্বত্রই চলেন। তার চোখ নাই, অথচ সবই দেখেন। কান নাই, কিন্তু সবই শোনেন। তাকে জানা কঠিন, তিনি জগতের আদিপুরুষ। এই বামনদেবই বিশ্বাত্মা, তার রূপ নেই, আকার নেই। উপনিষদের এই বর্ণনার প্রতীক রূপই হলো পুরীর জগন্নাথদেব। তার পুরো বিগ্রহ তৈরি করা সম্ভব হয়নি, কারণ তার রূপ তৈরিতে মানুষ অক্ষম। শুধু প্রতীককে দেখানো হয়েছে মাত্র।

জগন্নাথের হাত-পা নেই মানে তিনি কাউকে ধরেন না। আমাদের তাঁকে ধরতে হয়। তাহলে তিনি আমাদের ধরে রাখেন। তিনি আমাদের রক্ষা করেন। তিনি নিজে থেকে আমাদের ধরে রাখেন না। আমরা ধরলে তিনি ধরেন। যেমন ধরুন আপনি যদি ভগবানের কৃপা পেতে চান তাহলে তাঁর নিকট হাত পাততে হবে। হাত না পাতলে তো ভগবানেরও কৃপা পাওয়া যায় না। ঐ হাত পা ছাড়া জগন্নাথকে ধরে থাকলে তিনি দয়া করেন। জীবনকে টেনে নিয়ে যান।

সনাতনী দাদা-মায়েরা  এই জগন্নাথের রথযাত্রায় যেতে পারলে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করেন। রথযাত্রার রথের দড়ি টানতে পারলে যেন অনেক ধর্ম হয়ে গেল। মা-বোনেরা রাস্তায় রথযাত্রার দড়ি টানতে যান। কেউ টিটকারী মারেন, কেউ মস্করা করেন, কেউ আড্ডা দেন, কেউ রেস্তোরায় খান, কেউ দড়ি টানেন, কেউ ফুচকা খান, কেউ ডেটিং করেন। এটাই আমাদের ধর্মাচরন। এইসব করে আমাদের জীবনের কোন পরিবর্তন হয় কিনা আমি জানি না। আমরা জানি না এই জগন্নাথের পূজার ব্যাখ্যা কি? রথটানার ব্যাখ্যা কি? এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে আমাদের জীবনকে আমাদের টেনে নিতে হবে কেউ টেনে নিবে না। নিজেরা নিজেদেরকে সহযোগিতা না করলে ভগবানও কাউকেও সহযোগিতা করেন না। নিজেদের জীবনরথ নিজেকে টেনে নিতে হবে। আমরা ভাবি রথ টানলে মনে হয় আমার জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আপনারা অনেকে গেছেন তো রথযাত্রায় কার কত পরিবর্তন হলো? কার কত সমস্যার সমাধান হলো? তাহলে আমাদের জীবনের সব সমস্যা এক রথটানাতেই সমাধান হয়ে যেত  আমাদের আর কিছু করা লাগতো না। আমাদের যে এতে কত বড় ক্ষতি হয়ে যায় তা আমরা জানি না। আমাদের মেয়েরা যেভাবে রাস্তায় যাচ্ছে তা কি ঠিক হচ্ছে? পরিবার থেকে এগুলো ভালো ভাবে খেয়াল করা উচিত। রথযাত্রার কথা বলে মেয়ে কোথায় যাচ্ছে,কার সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কার সাথে ফুচকা খাচ্ছে তা কি পরিবার খোঁজ রেখেছে? মেয়েদের উৎসব কিংবা ভ্রমণেতে বাবা বা ভাই বা মা ছাড়া একা একা যেতে নেই। তাতে ঐ মেয়ের কি ক্ষতি হতে পারে তা আমাদের ধারণারও বাইরে। তাই রথযাত্রায় আপনার মেয়েকে,বৌকে,বোনকে পাঠাবেন কিনা ভেবে দেখুন।

শ্রীশ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন-

      জীবননাথকে হেলায় ফেলে
                জগন্নাথকে দেখতে গেলি, জীবনাথই যে জগন্নাথ
                 অহংকারে না দেখতে পেলি।
তাই আমাদের  বুঝতে হবে আসল জগন্নাথ কে? আসল জগন্নাথ হলো আমাদের জীবন, জীবনের বৃদ্ধি, জীবনের বাঁচা আর বাড়া। জীবনের সঠিক পরিচালনই হচ্ছে আসল জগন্নাথের রথ। এই জীবন্ত জগন্নাথকে আমাদের টেনে নিয়ে যেতে হবে। 
আবার, যিনি আমার জীবনের জীবন্ত আদর্শ তিনি আমার পরম আরাধ্য , তিনিই জগন্নাথ। তাকে মানতে হবে। তাঁর নির্দেশিত পথে চললে আমাদের জীবনের প্রকৃত মঙ্গল হবে। 

আমার মায়েদের স্বামীই হচ্ছেন তার আসল জগন্নাথ। তাকে সুষ্ঠুভাবে সেবা করলে তার প্রকৃত জগন্নাথের সেবা হবে। স্বামী সেবাই হচ্ছে তার প্রকৃত জগন্নাথের পূজা। তাই যারা স্বামী সেবা না করে জগন্নাথের রথযাত্রায় দড়ি টানায় ব্যস্ত তারা প্রকৃত প্রসাদ হতে বঞ্চিত হন। তারা জীবনে প্রকৃত আশীর্বাদ হতে বঞ্চিত হন। আর পরে জগন্নাথকে দোষ দেন জগন্নাথ আমাকে দেখল না। আমি তার এত সেবা করলাম,এত পূজো দিলাম আমার জীবনে কোন পরিবর্তন হলো না। আপনি প্রকৃত ধর্ম না করে যতই জগন্নাথের রথের দড়ি টানেন না কেন তাতে কোন মঙ্গল হবে না। 

ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে আমাদের ঐ পূজার প্রকৃত অর্থটা বুঝতে হবে। তারপর সঠিকভাবে অনুশীলন করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে।

 
 

No comments: