Sunday, July 10, 2016

হিন্দু নির্যাতনের কারন ও প্রতিকার

হিন্দু নির্যাতনের কারন ও প্রতিকার

কেন হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে? এর সমাধান কি?

সনাতনীরা এশিয়া মহাদেশের কিছু দেশে নির্যাতিত হচ্ছে। তাদের মন্দিরের মূর্তি ভাঙ্গা হচ্ছে। তাদের সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে। তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে জোর করে ভিটেমাটি ছাড়া করা হচ্ছে। হিন্দুমেয়েদের নির্যাতন করা হচ্ছে। জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এতসব সমস্যার পিছনে কারণগুলো কি কি?

১) হিন্দুরা ভীরু।
২) হিন্দুরা বহুনৈষ্ঠিক।
৩) হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য নেই।
৪) হিন্দুদের মধ্যে মানবতা কম।
৫) হিন্দুরা ধর্ম চর্চা করে না।
৬) হিন্দুরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্ব্বল।
৭) হিন্দুরা স্বার্থপর।
৮) হিন্দুরা তোষামোদকারী।
৯) হিন্দুরা মূর্তিপূজারী যেটা নিয়ে অন্য ধর্মের সাথে মতবিরোধ আছে।
১০) হিন্দুরা ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা নিয়ে তেমন আগ্রহী নয়।
১১) হিন্দুরা যুগাবতারকে মানে না। যুগধর্মকে অনুসরণ করতে চাই না।
১২) হিন্দুরা কুসংস্কারাচ্ছন্ন।
১৩) হিন্দুরা হিংসুক।
১৪) হিন্দুরা ধর্মের অগ্রগতি নিয়ে গবেষণা করে না।
১৫) হিন্দুরা বিশ্বাসঘাতক এবং আত্মঘাতী।
১৬) অন্যধর্ম নিয়ে জ্ঞান কম।
১৭) হিন্দুরা রাজনীতির ব্যাপারে উদাসীন।
১৮) হিন্দুরা ধর্মসংস্কারে আগ্রহী নয়।
১৯) সঠিক নেতৃত্বের অভাব।
২০)  হিন্দুরা দেবদেবীকে প্রকৃতরূপে শ্রদ্ধা করে না। প্রকৃত উপাসনা থেকে দূরে আছে।
২১) নারী জাতিকে অসম্মান করে।
২২) ভঙ্গুর ধর্মীয় ব্যবস্থা।
২৩) লোভের বশবর্তী।
২৪) শিক্ষিত লোকেরা ধর্ম বিষয়ে উদাসীন।
২৫)  হিন্দুরা মাদকাসক্ত।
২৬) ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা কম।
২৭) হিন্দুরা প্রতিবাদী নয়।
২৮) হিন্দুরা নিরীহ স্বভাব প্রকৃতির।
২৯) হিন্দু পুরহিতরা যথেস্ট জ্ঞানী নন। তারা সমাজে জ্ঞান বিতরনে অনাগ্রহী ।
৩০) ধর্মের জন্য প্রতিরোধ করতে কুন্ঠাবোধ করে।
৩১) ধর্মীয় শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার।
৩২) আত্মস্বার্থে ধর্মীয় ফতোয়া প্রচলন।
৩৩) রাজনীতিকভাবে ধর্মকে হেয় করা এবং প্রসারে বাধা দেয়া।
৩৪) সঠিক পথ নিয়ে বিভ্রান্তি।
৩৫) এক পথের সাথে অন্য পথের মতদ্বৈততা।
৩৬) সনাতনী আদর্শমূলক গ্রন্থের প্রকাশনা ও প্রচার কম।
৩৭) নীতিহীন কর্মযজ্ঞ।
৩৮) যথাযথ ধর্মীয় আইনের অভাব। আইনের প্রয়োগে গাফেলতি।
৩৯) কলহপ্রিয় ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার অভাব।
৪০) আন্তর্জাতিক সংগঠন শক্তিশালী নয়।
৪১) পুরনোকে আকড়ে ধরে থাকার প্রবণতা।
৪২) ধর্মপ্রচারের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করা।
৪৩) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ধর্ম চর্চা।
৪৪) নিজস্ব সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি।
৪৫) ধর্মকে আত্মস্বার্থ প্রতিষ্ঠায় ব্যবহার।
৪৬) ধর্মসভার নামে পৌরাণিক কাহিনীর প্রচার।
৪৭) ধর্মীয় প্রায়োগিক জ্ঞানের অভাব।
৪৮)  পারিবারিক ধর্মচর্চা কমে যাওয়া।
৪৯) যুবক সম্প্রদায়ের মধ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি এবং সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাব।
৫০)  বিশৃঙ্খল জীবন-যাপন।
৫১) মনস্তাত্ত্বিক দাসত্বের স্বীকার।
৫২) বেদ ও বেদান্তের অপব্যবহার।
৫৩) অস্পৃশ্যতার প্রচলন।
৫৪) বর্ণাশ্রমের অপব্যাখ্যা।
৫৫) উচু-নিচু ভেদাভেদ।
৫৬) মন্দিরভিত্তিক সঠিক ধর্মচর্চার প্রবর্ত্তন না কর।
৫৭) মূর্তিপূজার নামে কোটি কোটি টাকার অপচয়।
৫৮) ধ্যান আর প্রার্থনার প্রতি অনাগ্রহ।
৫৯) লৌকিকতাকে বাদ দিয়ে অলৌকিক তত্ত্বকে প্রাধান্য দেয়া।
৬০) ধর্মবিরোধীদের সাথে রাজনৈতিকদের এবং ধর্মীয় সংগঠনের আঁতাত।
৬১) ধর্মীয় বিশ্বাসে দুর্ব্বলতা।
৬২) আজগুবী তত্ত্বে বিশ্বাসী।অলৌকিক ধর্মপ্রচারে বিশ্বাস যা বাস্তবতা বিবর্জিত।
৬৩) নকল ধর্মপ্রচারকের প্রসার ও প্রভাব বিস্তার।
৬৪) সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি।
৬৫) সনাতনীদের সম্পদ ও ব্যবসা আত্মসাৎ করা।
৬৬) সনাতনীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।
৬৭) সনাতনীদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করা।
৬৮)  সনাতন ধর্মকে দুর্ব্বল করা।
৬৯) ধর্মান্তরের পথ সুগম করার জন্য।
৭০) সনাতনীদেরকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য।
৭১) ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।
৭২) হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য যাতে সৃষ্টি হতে না পারে।
৭৩) নিজেদের মধ্যে কোন্দলের জন্য।
৭৪) বিভিন্ন অবতারের জীবনীকে বিকৃত প্রচার।
৭৩) ধর্মীয় গ্রন্থের বিকৃতি।
৭৪) সময়মত সদদীক্ষা না নেওয়া।
৭৫) ব্রাহ্মণদের নৈতিক স্থলন।
৭৬) সামগ্রিক পরিকল্পনার অভাব।

মূলত হিন্দুরা বহুদেবদেবী, বহুঅবতারবাদ অথবা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে কেউ সাকার পূজারী আবার কেউ নিরাকার পূজারী। আবার বিভিন্ন মত পথের মধ্যে আচার-অনুষ্ঠানগত পার্থক্য বিদ্যমান। তবে হিন্দুদের ধর্মানুশীলন ও সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। অনেক সময় ভিন্নধর্মের লোকেরা হিন্দুদের এই বিষয়টা নিয়ে ভুল বুঝে। তারা মনে করে হিন্দুরা শুধু মূর্তি পূজাই করে । হিন্দুরা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন যুগে অবতারবাদে বিশ্বাসী। ভিন্ন ভিন্ন যুগে অবতারগন ভগবানরূপে এসে যুগমাফিক বিধান দিয়ে গেছেন। মানুষকে উদ্ধারের বাণী শুনিয়েছেন। তাই বাইরে থেকে হিন্দুদের যেটা মনে হয় আসলে তারা সেটা নয় তাদের মধ্যে ভিন্ন কিছু আছে। তারা শুধু মূর্তিপূজারী নয়।

হিন্দুরা কেন নির্যাতিত হচ্ছে তার বেশ কিছু কারন তুলে ধরেছি। হিন্দুরা যদি রক্ষা পেতে চায়,নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে চায় তাহলে নানামুখী বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সমস্যাটা দীর্ঘদিনের । তার সমাধানের জন্য সময় লাগবে । কিছু সমাধানসূত্র নিচে দেওয়া হলো-
১) ধর্মীয় অনুশীলন, উপাসনা, ধ্যান ,জপ এসব চর্চা বাড়াতে হবে।
২) সময়মত দীক্ষা নিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা নিতে হবে।
৩) যে যে মত ও পথের হোক না কেন কাদা ছোড়াছুড়ি না করে পারস্পরিক সুভ্রাতৃত্ব বাড়াতে হবে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করতে হবে।
৪) ভক্তিবাদের সাথে সাথে নিজেদের আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা করতে হবে।
৫) অর্থনেতিক ,রাজনৈতিক,কূটনৈতিকভাবে যাতে হিন্দুরা সমৃদ্ধি লাভ করে তার ব্যবস্থা ও পরিকল্পনা করতে হবে।
৬) ধর্মীয় শিক্ষালয় ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানচর্চা বাড়াতে হবে। নারী ও গার্হস্থ্য শিক্ষার উপর জোর দেওয়া জরুরি।
৭) কুসংস্কার,কুপ্রথা দূর করতে হবে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধঅনুকরণ বন্ধ করতে হবে।
৮) ধর্মীয় প্রকৃত ইতিহাস প্রচার করতে হবে। ধর্মীয় বিভিন্ন ঋষি,মুনি,অবতার, ধর্ম সংস্কারদের জীবনী প্রচার করতে হবে।
৯) ধর্মীয় বই প্রকাশ করতে হবে এবং সহজলভ্য  করতে হবে।
১০)  মূর্তিপূজা সংযতভাবে করতে হবে। কোন ডিজে গান না বাজিয়ে, মদপান না করে সাত্ত্বিকভাবে করতে হবে।
১১) বলিপ্রথা বন্ধ করতে হবে।
১২) বিবাহ পদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। পণপ্রথা বন্ধ করতে হবে।
১৩) আন্তর্জাতিকভাবে ধর্ম প্রচার ও প্রসার করতে হবে। আন্তর্জাতিক একটা সনাতনী সংগঠন তৈরী করতে হবে। এর কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
১৪) সনাতনীদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো তৈরী করতে হবে। সনাতনীদের নির্যাতনের বিচার যাতে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫) সনাতনী কর্তাব্যক্তি যারা আছেন তারা এলাকা ভিত্তিক কমিটি করে কারা অসহায় আছে ,দরিদ্র আছে তাদের আর্থিক ও প্রশিক্ষণগত সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। তারা যাতে সহজে নির্যাতিত না হয় তার জন্য এলাকা ভিত্তিক ভ্রমন করে তদারকি বারাতে হবে।
১৬) সনাতনীদের জন্য আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে সংসদে তাদের জন্য কোটা রাখতে  হবে ।
১৭) সনাতনীদের জন্য সরকারী চাকরিতে একটা কোটা রাখতে হবে। যেহেতু তাদের সংখ্যা কম।
১৮) নারী শিক্ষার উপর জোর দিতে হবে। নারীদের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট হতে হবে।
১৯) প্রয়োগিক বিভিন্ন পঠনগত বিষয় নিয়ে গবেষনা করতে হবে এবং প্রয়োগ বাড়াতে হবে।
২০) মদ ও বলি ত্যাগ করতে হবে।
২১) সনাতনীদের জন্য বিশেষ জবপোর্টাল তৈরী করতে হবে। যাতে তারা চাকরীহীন না থাকে।
২২) নির্যাতিতদের সহায়তার জন্য কুইক রেসপন্স টিম তৈরী করতে হবে।
২৩) আদালতে আলাদা সনাতনী বিচার বোর্ড গঠন করতে হবে।
২৪) সঠিক বর্ণাশ্রম প্রথা চালু করতে হবে।
২৫) মেয়েরা যাতে ধর্মান্তরের ফাঁদে না পড়ে তার জন্য সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
২৬) ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে।
২৭) বর্তমান যুগপুরুষোত্তমকে অনুসরণ করতে হবে।
২৮) সবার মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। একতাই শক্তি।
২৯) মন্দিরগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করতে হবে। প্রয়োজন হলে পাহাড়ার ব্যবস্থা করা যায়।


রচয়িতা
কিশোরী মোহন দে

No comments: